অনেক দিন ধরে ভাবছি একটা বেপার নিয়ে একটু লিখব, কিন্তু সময় আর সুযোগ হযে উঠছেনা. আজকে বিষয়টা নিয়ে কথা হচ্ছিল, তাই যতক্ষণ না এই বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখতে পারছি পড়াশুনা তেউ মনটা বসছেনা . দেখি আমার মনের পিরাটা লিখার পরে কিছুটা হলেউ কমে কিনা.কিছুদিন আগে এক আদরের চোট ভাই খুবই চিন্তিত হযে বলল আপুনি আমি খুবই বিপদে আছি . আমি খুবই চিন্তিত হযে বললাম কেন কি হলো সব ঠিক আছে ? তারপর সে যা বলল তা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ. সে বলল আম্মা আমার জন্য বউ দেখতেসে, আমি বললাম তাই নাকি সেতো খুবই ভালো খবর. সে বলল না আমি অনেক চিন্তায় আছি . আমি বললাম কিসের ? সে বলল আমি এমন একটা বউ চাই যে কিনা আমার পরিবার কে আমার চাইতেউ বেশি ভালবাসবে . আমি বললাম সেতো অনেক ভালো চিন্তা, আজকালকার দিনে এমন চিন্তা কটা ছেলে করে. কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে, তুমিকি তোমার বউ এর পরিবারের সবাইকে তার চাইতেউ বেশি ভালবাসবে? একমুহূর্ত চিন্তা না করে সে বলল নাহ. আমি অনেক কষ্টে রাগটা দমিয়ে ভাবলাম বয়স কম, ও কি আর বুঝে জীবন সম্পর্কে. একটু বুঝিয়ে বলে দেখি আমার চিন্তাটা সে বুঝে কিনা. যদিও আমি এখনো জানিনা সে আমার চিন্তাটা সেদিন বুঝে ছিল কিনা.
একটি নতুন বউ আজীবনের জন্য তার পরিবার, ভালবাসার সব প্রিয় মুখ, তার ঘরের দেয়াল থেকে শুরু করে তার পুরো বেড়ে ওঠার চির চেনা পরিবেশ ছেড়ে, শুধু বর এর মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের মাঝে অনেক কষ্ট আর শংকা নিয়ে সে সব ছেড়ে আসে. সে সময় প্রতিটা মুহুর্তে তার মনের ভেতর কি কঠিন লড়াই যে ঘটে যায় তা একটি ছেলের পক্ষে কোনদিনই বুঝে ওঠা সম্ভব না. তবুও একটি বউ এত বড় তেগটি করে. কোনদিন ছেলেরা তাকি ভেবে দেখেছে ! যদি বর টিকে বলা হয় তার পরিবার ছেড়ে তাকে চলে আসতে হবে আজীবনের জন্য, তখন তার কেমন লাগবে ? লোকেরা তখন তাকে ঘর জামাই বলবে, তাইতো !
আমাদের ধর্মের কোথাউ এটা লেখা নাই যে একটি বউ কে এই কষ্টটা সহ্য করতে হবে, বরংচ দুজনকেই নতুন করে আলাদা জীবন শুরু করতে বলা হযেছে. আমার কোনো সমস্যা নাই এই রীতিতে. শুধু একজন নারী হিসাবে কষ্ট বুকে পোষণ করা ছাড়া যে, আমাদের নারীদের এত বড় কষ্ট সইতে হয়. আমার কষ্টটা ঐখানে যে একজন স্বামী হিসাবে একজন পুরুষ চেনা নাই জানা নাই একজন মানুষের কাছ থেকে কিকরে আশা করে যে এই নতুন মানুষটি পরিবারকে প্রথম দিন থেকেই ভালবাসবে , এমনকি তার চাইতেউ বেশি. বিশেষ করে সে পুরুষ যে কিনা ভাবতেই পারেন না তার বউ এর পরিবারকে এতটুকু ভালবাসা দেবার ! কেনো বউ এর পরিবারের প্রতিটা মানুষকি মানুষের কাতারে গণ্য হন না? বউ এর মা – বাবা, ভাই-বোন কি মা – বাবা, ভাই – বোন এর কাতারে গণ্য হন না ? বউ এর পরিবারের মানুষদের ভালবাসার কি কোনই দাম নেই ? তারাযে সারাজীবন কূতোটা কষ্ট করে লালন করলেন আপনার বৌটিকে, এইটা জেনে এউ যে সে সারাজীবন তাদের সাথে থাকবেনা. তাদের যে কত স্বপ্ন এই কন্যার নতুন স্বামী টাকে নিয়ে, কত আশা- ভরসা কন্যার এই স্বামীটির উপরে, তাকি সাই স্বামীটি কখনো ভেবে দেখেছে ? আমি জানিনা একজন স্বামী কিকরে আশা রাখে যে তার বউ এর পরিবারকে সে ভালো না বাসলেউ, বউ তার পরিবারকে ভালবাসবে ! বউ এর পরিবারকে সম্মান না দিলেউ বউ তার পরিবারকে সম্মান দিবে? ভালবাসা , সম্মান বাজারে কিনতে পাওয়া যায়না . তা অর্জন করতে হয়. সম্মান আর ভালবাসা একটি আরেকটি ছাড়া চলতে পারেনা. আমি একজন নারী হিসাবে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি আমিতো একদমই পারবনা সম্মান আর ভালবাসা দিতে, যদিনা আমার স্বামী আমার পরিবারের প্রতিটা সদসকে তোতাটা সম্মান আর ভালবাসা না দেয় . হা বিয়ে হযেছে বলে যত টা পারি দায়িত্ব পালন করে যাব. কিন্তু মন থেকে সম্মান আর ভালোবাসাটা আসবেনা .
মানুষ হিসেবে কেউ এই একদম সঠিক না, সব পরিবারেই খারাপ ভালো থাকবে, মতের মিল সবার সাথেই হবে . হাতের পাচ আঙ্গুল যেমন এক নয় তেমনি পরিবারের একেকটি সদস্যও এক নয়. তাই বলে তাদেরকে ভুলা যায়না , তাদেরকেউ ভালোবেসে যেতে হয় . আর সত্য কথাটি হলো একজন স্বামী যদি মন দিয়ে শুরু থেকে সম্মান টা তার বউ র প্রতিটা সদস্যকে দিয়ে আসেন , বৌটি ও খুবই তারাতারি তার স্বামীর পরিবারকে নিজের ভাবা শুরু করবে. স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসাটাও অধিকতর হবে.
আমাদের সামাজিক চিন্তা চেতনার জন্য অনেক স্বামী সংকোচে থাকেন বউ এর পরিবারটিকে সঠিক আদরটা দিতে ,পাছে তার পরিবারের সবাই তাকে না বলে যে সে বউ পাগল. এই বেপারটি স্বামী হিসাবে তাকেই ঠিক করতে হবে, নিজের পরিবারটিকে বোঝাতে হবে কেন সে তা করছে. তাদেরকে বোঝাতে হবে স্বামী হিসাবে এটা তার কর্তব্য, ঠিক যেমনটি একজন বউ এর ও তাদের প্রতি . আর তাছাড়া অন্যকে খাটি ভালোবাসাটা দিলে তার অনেকটা ফেরতও আসতে বাধ্য.
আমাদের নবিজি বলেছেন বউ এর মা বাবা কে নিজের মা বাবার মতো দেখতে, সত্য করে বলবেন কি কটা পুরুষ তা করতে পারেন? অথচ নিজের নব বিবাহিত বউ র কাছ থেকে তেমনটি আশা রাখেন! বেপারটা খুবই বড় রকমের দুমুখী বেপার হযে গেল নয়কি ?
আমার এই লিখাটির উদ্দেশ্য কোনো ভাই কে নিচু করা নয়, হয়তো বলতে পারেন আমি কোন অধিকারে এইসব বলছি. আমি একজন নারী হিসাবে বলছি. যেকিনা পনেরো বছর সংসার করেছি , স্বামীর পরিবারকে প্রথম দিন থেকেই নিজের বলে ভেবেছি, স্বামীর থেকে তাদের আমি খেয়াল অনেক বেশি রেখেছি. যদিও বউ হিসাবে আমি তা না করলেউ পারতাম. এমনকি স্বামীর সাথে তার পরিবারের সবার সম্পর্ক যথেস্ষ্ট খারাপ থাকায় তা নিজ দায়িত্বে ভালও করেছি. যদিও সে আমার পরিবারকে অসম্মান আর কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি.তবুও নিজের দায়িত্ব থেকে একচুল নড়িনি. কারণ যখন থেকে মনে পরে আমি তা দেখে এসেছি, আমি দেখেছি আমার মা চাচীরা ঠিক কিভাবে সব করে গেছেন একটুও উফ না করে. কিন্তু সত্যটি হলো কোনদিন স্বামীর প্রতি সম্মান আমার আসেনি, ভালবাসা তো অনেক দুরের বেপার. শুধু বউ হিসাবে নিজের সব দায়িত্ব করে গেছি.
আমার সময়টা ভিন্ন ছিল, এখনকার সময়টা ভিন্ন. আমার মতো নারী হইতো এখনো আছে, কিন্তু তেমন একটা না. আমি আসলে চাইওনা আমার মতো একটি মে এউ হোক. তাছাড়া কেন সহ্য করবে তারা এইসব ? ওদেরতো মন আছে, আত্মসম্মান আছে, অধিকার আছে. আর ওদের পরিবার ও ওদের কাছে ততটাই মূল্যবান , ঠিক যতটা একজন পুরুষের কাছে তার নিজের পরিবার.
তাই বলছি, ভাইরা একটু ভেবে দেখবেন এই বোনটির কথাগুলো. অনেক ভাই আছে নতুন জীবন শুরু করবে, একটু ভেবে দেখো তোমরা আমার কথাগুলো.পনেরো বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি. বউ এর চোখে সম্মান আর বউ এর মনে যদি আজীবন অনেক উপরে থাকতে চাউ তাহলে, বউ এর ভালবাসার মানুষগুলোকে ভালবাসতে তোমরাও চেষ্ঠা কোরো. . একদিনেই ভালবাসা গড়েউঠবেনা . কিন্তু মন থেকে চেষ্ঠা করো . বিশ্বাস করো, শশুর বাড়ির মানুষগুলো শুধু একটু সম্মান এই চায়, টাকা ,বাড়ি-গাড়ি চায়না. এখনো সময় আছে একটু চিন্তা-চেতনা কে বদলাউ, তানাহলে কোনো বউ এই আর একসাথে শশুর বাড়ির মানুষকে নিয়ে থাকতে রাজি হবেনা. ইতিহাস সব নারীরাই পড়ে এবং চোখের সামনে সবকিছু দেখে বড় হয় , নারীদের কে তাদের চিন্তা – ধারণা আর মন পাল্টাতে বাধ্য কোরোনা …..